দেয়াল
দেয়াল (২০১৩); হুমায়ূন আহমেদ : ৮.৮
যেখানে দেয়াল বইটি নিয়ে আনিসুজ্জামান বা সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মতো ব্যক্তিবর্গ তাদের মত ব্যক্ত করেছেন, সেখানে আমার এটি নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলা বা খোঁজার থাকতে পারে না। তবুও চলুন দেখা যাক, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার শেষ এবং বিতর্কিত লেখা দেয়াল বইটিতে কি বলতে চেয়েছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ের প্রক্ষাপটে হুমায়ূন আহমেদ জন্ম দিয়েছিলেন “মধ্যাহ্ন” নামের উপন্যাসের পরবর্তী ‘৬৯ এর প্রক্ষাপটের গল্প তুলে এনেছেন তার “মাতাল হাওয়া”য়। ক্রমানুসারে ‘৭১ কে নিয়ে তিনি দিয়েছেন কালজয়ী “জোছনা ও জননীর গল্প”। সবগুলোতেই তিনি কোন এক গল্প বলার ছলে দেখিয়ে গেছেন তৎকালীন ইতিহাসকে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “উপন্যাস উপন্যাস- উপন্যাস ইতিহাস নহে”। কিন্তু যেখানে লেখক তারিখ ও রেফারেন্সের মোটাদাগে উপন্যাস লিখে গিয়েছেন, সেটি যে ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করবে তা বলাই বাহুল্য। আর সেই ইতিহাস যখন হয় রাজনৈতিক ইতিহাস, তখন গল্পের জন্যও দাগ লাগতে পারে রাজনীতিতে। তবে লেখক এখানে যথেষ্ট মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন, কারণ তিনি কখনই রাজনীতিতে ছিলেন না। বরং দূর থেকে যা দেখেছেন বা যা উপলব্ধি করেছেন, তার ফলাফলই হল “দেয়াল”।
পাঠককে প্রথম পাতায় আটকে দিতে বরাবরের মতো হুমায়ূন আহমেদ সিদ্ধহস্তে নিয়ে আসেন ভবঘুরে শফিক নামের চরিত্রকে। এই শফিক গল্পের অন্যতম চরিত্র গৃহশিক্ষক হিসাবে যান অবন্তির বাসায় যা বাবা নিরুদ্দেশ এবং মা ইসাবেলা থাকেন স্পেনে। সম্প্যের সাথে অবন্তির মুক্তযুদ্ধের কিছু স্মৃতিও উঠে আসে যেখানে কিনা তার বিবাহ হয় এক পীরের ছেলে হাফেজ জাহাঙ্গীরের সাথে। অবন্তি থাকে তার দাদা সরফরাজের কাছে। এই এই সরফরাজের হাত ধরেই গল্পে চলে আসেন খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহেরের মতো অন্যতম চরিত্রদের। অনেক পার্শ্ব চরিত্রের পাশাপাশি লেখক বলে গেছেন সেই হৃদয় বিদারক আগস্টের কথা। সেখানে মেজর ফারুকের বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা বা মোস্তাকের ৮৩ দিনের ক্ষমতার অপব্যবহার যার চূড়ান্ত নিদর্শন ৪ নেতা হত্যা, খালেদ মোশাররফের ক্ষমতায় আসা বা কর্ণেল তাহেরের সিপাহী বিপ্লবের সবটাই তুলে এনেছেন। দেখিয়েছেন বিশ্ব রাজনীতির এক অদ্ভুদ সেকুলাস। এছাড়াও দাবা খেলার মতো জটিল কিছু চাল যেমন যে কর্ণেল তাহের জিয়াউর রহমানকে জেল্মুক্ত করল তাকেই আবার ক্ষমতা বলে ফাসিতে ঝুলানোর মতো ঘটনাকেও সামনে এনেছেন; যার পরিসমাপ্তি হয়েছে মেজর মঞ্জুর কর্তৃক প্রেরিত ঘাতক বাহিনীর হাতে। সামরিক শাসনের নামে যে অস্থিতিশীল অবস্থার সূচনা হয়েছিল তা যথেষ্ট স্পষ্টই দেখানো হয়েছে উপন্যাসটিতে।
একজন লেখক তার চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করেন তার কলমের মাধ্যমে। এজন্য শেষ কালে ধর্ম নিয়ে লেখকে মন্তব্যগুলোও চলে এসেছে হাফেজ জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে, দেখিয়েছেন আস্তিকতার পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়কে জানার জন্য অন্যতম একটি বই এটি।
চলুন কিছুক্ষন কেটাছেড়া করা যাক, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার শেষ এবং বিতর্কিত লেখা “দেয়াল” বইটিতে কিসের দেয়াল ভাংতে চেয়েছিলেন?
বাংলাদেশের রাজনীতি বলতে যে মহান নায়কের ছবি সামনে আসে, তিনিই হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ডাক শুনে বাঙ্গালি কিছু না ভেবেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে, পরবর্তীতে তার হত্যায় দেশে কোন প্রতিবাদ মিছিল পর্যন্ত না হওয়ার বিষইয়টি লেখককে ভাবিয়েছে। তিনি আরো ভেবেছেন, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত নতুন একটা জাতিকে নিয়ে কিভাবে তিনি আগাবেন, যার পথটা খুবই বন্ধুর? এখানে তিনি নেতার জন্য ব্যথিতও হয়েছেন। কিন্তু তার তৈরী রক্ষীবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা সুন্দরভাবেই বর্ণনা করেছেন তিনি, দেখিয়েছে রক্ষীবাহিনী কর্তৃক বাড়ি হারানো তার নিজের পরিবারের অসহায়ত্ব। বঙ্গবন্ধু খুব সহজে আপমর জনগনের সাথে মিশতে পারত তাও বুঝিয়েছিলেন। তাকে হত্যা করা হতে পারে এমন খবরকে কোন রকম পাত্তা না দেয়ার মাধ্যমে তার দৃঢ়তা ও দেশবাসীর প্রতি তার বিশ্বাসের প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু লেখক বঙ্গবন্ধুর তৈরী বাকশালের পক্ষে ছিলেন না। যেহেতু, লেখক রাজনীতি নিয়ে বেশি নড়াচড়া করতেন না তাই তার শিক্ষকের আদেশে বাকশালের পক্ষে স্বাক্ষর করতে রাজি হোন যদিও সময়ের কারণে আর করা হয়ে ওঠে না। এমন কিছু বিষয়ের জন্যই হয়ত বঙ্গবন্ধু হত্যা ঘটনাকে তিনি সাবলীল ভাবেই গ্রহন করেছিলেন।
সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে একইভাবে কে কার দিকে অবস্থান করছে তা ঠিকভাবেই নির্ধারণ করেছিলেন। ২ বার ক্ষমতা বদলের দাবার চাল যখন জিয়াউর রহমানের হাতে তখন তিনি উল্লেখ করেন, জিয়াউর রহমান কর্তৃক গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এছাড়াও ১১৪৩ অফিসারের হত্যাকে তিনিও সাধারণ ভাবে নেননি। তার ভাষায় এসব অফিসারের দীর্ঘশ্বাস জমা হয়েছিল চট্টগ্রামে, যেখানে কিনা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। যদিও লেখকের নিজস্ব ধারনা মেজর মঞ্জুর কর্তৃক ঘাতক বাহিনী প্ররনের অন্যতম ইন্ধনদাতা মঞ্জুরের স্বয়ং স্ত্রী। এত কিছুর পরও জিয়াউর রহিমানের প্রতি লেখকের সহানুভূতি প্রকাশ পায় কারণ মৃত্যুর পর দেখা যা জিয়া তার পরিবারের জন্য কিছু করে যেতে পারে নি। পাশাপাশি কর্ণেল তাহেরের বীরত্বগাথা তিনি তার ফাঁসি পর্যন্ত বর্ণ্না করেন।
বইয়ের কয়েকটি এপিগ্রামের মধ্যে একটিতে তিনি বলেছেন, যে লাঠি দিয়ে অন্ধমানুষ পথ চলে, সে লাঠি দিয়ে মানুষও খুন করা যায়। অর্থ্যাৎ একটাই বস্তু যা কখনও ভাল আর কখনও খারাপের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে তিনি বলেছেন অনেক না বলা কথা, বুঝিয়েছেন রাজনীতিবিদদের সম্পর্কেও।
বইটি মূলত বিতর্কিত হয় এবং তা আদালত পর্যন্ত গড়ায় ২ টি কারণে। প্রথমটি শেখ রাসেলের হত্যার বর্ণ্নায় ভুল ও দ্বিতীয়টি মেজর মোস্তাককে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় ছিল না বলে উল্লেখ্য আছে যা কি না আদালতের রায়ের বিপরীত। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে হুমায়ূন আহমেদ তা সংশোধন করতে চাইলেও তা আর হয়ে ওঠে নি অসুস্থতার জন্য।
লেখকের উল্লেখ অনুযায়ী তিনি কখনই রাজনীতিতে ছিলেন না এবং এজন্য খোলসের মধ্যে থাকতেন সর্বদা। এই খোলসের উদাহরণ পাওয়া যায় শিক্ষকের চাপে তার বাকশালে সম্মতি জানানোর বিষয়ে। এক্ষেত্রেও হয়ত তিনি তার সেই খোলস দিয়েই আদালত থেকে পাশ কাটিয়ে গেছেন কি না তা স্বয়ং তিনিই জানেন।
দেশমাতার ঋন শোধ করতে তিনি রচনা করেছিলেন "জোছনা ও জননীর গল্প”। আর শেষকালে লেখক হিসাবে সেই মায়ের বাকি সন্তানদের কাছে নিজ দায়িত্ব হিসাবেই দিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে যান “দেয়াল” যার ফলে বর্তমান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব প্রতীয়মান হয় তাদের নিকট।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ের প্রক্ষাপটে হুমায়ূন আহমেদ জন্ম দিয়েছিলেন “মধ্যাহ্ন” নামের উপন্যাসের পরবর্তী ‘৬৯ এর প্রক্ষাপটের গল্প তুলে এনেছেন তার “মাতাল হাওয়া”য়। ক্রমানুসারে ‘৭১ কে নিয়ে তিনি দিয়েছেন কালজয়ী “জোছনা ও জননীর গল্প”। সবগুলোতেই তিনি কোন এক গল্প বলার ছলে দেখিয়ে গেছেন তৎকালীন ইতিহাসকে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “উপন্যাস উপন্যাস- উপন্যাস ইতিহাস নহে”। কিন্তু যেখানে লেখক তারিখ ও রেফারেন্সের মোটাদাগে উপন্যাস লিখে গিয়েছেন, সেটি যে ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করবে তা বলাই বাহুল্য। আর সেই ইতিহাস যখন হয় রাজনৈতিক ইতিহাস, তখন গল্পের জন্যও দাগ লাগতে পারে রাজনীতিতে। তবে লেখক এখানে যথেষ্ট মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন, কারণ তিনি কখনই রাজনীতিতে ছিলেন না। বরং দূর থেকে যা দেখেছেন বা যা উপলব্ধি করেছেন, তার ফলাফলই হল “দেয়াল”।
পাঠককে প্রথম পাতায় আটকে দিতে বরাবরের মতো হুমায়ূন আহমেদ সিদ্ধহস্তে নিয়ে আসেন ভবঘুরে শফিক নামের চরিত্রকে। এই শফিক গল্পের অন্যতম চরিত্র গৃহশিক্ষক হিসাবে যান অবন্তির বাসায় যা বাবা নিরুদ্দেশ এবং মা ইসাবেলা থাকেন স্পেনে। সম্প্যের সাথে অবন্তির মুক্তযুদ্ধের কিছু স্মৃতিও উঠে আসে যেখানে কিনা তার বিবাহ হয় এক পীরের ছেলে হাফেজ জাহাঙ্গীরের সাথে। অবন্তি থাকে তার দাদা সরফরাজের কাছে। এই এই সরফরাজের হাত ধরেই গল্পে চলে আসেন খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহেরের মতো অন্যতম চরিত্রদের। অনেক পার্শ্ব চরিত্রের পাশাপাশি লেখক বলে গেছেন সেই হৃদয় বিদারক আগস্টের কথা। সেখানে মেজর ফারুকের বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা বা মোস্তাকের ৮৩ দিনের ক্ষমতার অপব্যবহার যার চূড়ান্ত নিদর্শন ৪ নেতা হত্যা, খালেদ মোশাররফের ক্ষমতায় আসা বা কর্ণেল তাহেরের সিপাহী বিপ্লবের সবটাই তুলে এনেছেন। দেখিয়েছেন বিশ্ব রাজনীতির এক অদ্ভুদ সেকুলাস। এছাড়াও দাবা খেলার মতো জটিল কিছু চাল যেমন যে কর্ণেল তাহের জিয়াউর রহমানকে জেল্মুক্ত করল তাকেই আবার ক্ষমতা বলে ফাসিতে ঝুলানোর মতো ঘটনাকেও সামনে এনেছেন; যার পরিসমাপ্তি হয়েছে মেজর মঞ্জুর কর্তৃক প্রেরিত ঘাতক বাহিনীর হাতে। সামরিক শাসনের নামে যে অস্থিতিশীল অবস্থার সূচনা হয়েছিল তা যথেষ্ট স্পষ্টই দেখানো হয়েছে উপন্যাসটিতে।
একজন লেখক তার চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করেন তার কলমের মাধ্যমে। এজন্য শেষ কালে ধর্ম নিয়ে লেখকে মন্তব্যগুলোও চলে এসেছে হাফেজ জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে, দেখিয়েছেন আস্তিকতার পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়কে জানার জন্য অন্যতম একটি বই এটি।
চলুন কিছুক্ষন কেটাছেড়া করা যাক, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার শেষ এবং বিতর্কিত লেখা “দেয়াল” বইটিতে কিসের দেয়াল ভাংতে চেয়েছিলেন?
বাংলাদেশের রাজনীতি বলতে যে মহান নায়কের ছবি সামনে আসে, তিনিই হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ডাক শুনে বাঙ্গালি কিছু না ভেবেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে, পরবর্তীতে তার হত্যায় দেশে কোন প্রতিবাদ মিছিল পর্যন্ত না হওয়ার বিষইয়টি লেখককে ভাবিয়েছে। তিনি আরো ভেবেছেন, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত নতুন একটা জাতিকে নিয়ে কিভাবে তিনি আগাবেন, যার পথটা খুবই বন্ধুর? এখানে তিনি নেতার জন্য ব্যথিতও হয়েছেন। কিন্তু তার তৈরী রক্ষীবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা সুন্দরভাবেই বর্ণনা করেছেন তিনি, দেখিয়েছে রক্ষীবাহিনী কর্তৃক বাড়ি হারানো তার নিজের পরিবারের অসহায়ত্ব। বঙ্গবন্ধু খুব সহজে আপমর জনগনের সাথে মিশতে পারত তাও বুঝিয়েছিলেন। তাকে হত্যা করা হতে পারে এমন খবরকে কোন রকম পাত্তা না দেয়ার মাধ্যমে তার দৃঢ়তা ও দেশবাসীর প্রতি তার বিশ্বাসের প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু লেখক বঙ্গবন্ধুর তৈরী বাকশালের পক্ষে ছিলেন না। যেহেতু, লেখক রাজনীতি নিয়ে বেশি নড়াচড়া করতেন না তাই তার শিক্ষকের আদেশে বাকশালের পক্ষে স্বাক্ষর করতে রাজি হোন যদিও সময়ের কারণে আর করা হয়ে ওঠে না। এমন কিছু বিষয়ের জন্যই হয়ত বঙ্গবন্ধু হত্যা ঘটনাকে তিনি সাবলীল ভাবেই গ্রহন করেছিলেন।
সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে একইভাবে কে কার দিকে অবস্থান করছে তা ঠিকভাবেই নির্ধারণ করেছিলেন। ২ বার ক্ষমতা বদলের দাবার চাল যখন জিয়াউর রহমানের হাতে তখন তিনি উল্লেখ করেন, জিয়াউর রহমান কর্তৃক গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এছাড়াও ১১৪৩ অফিসারের হত্যাকে তিনিও সাধারণ ভাবে নেননি। তার ভাষায় এসব অফিসারের দীর্ঘশ্বাস জমা হয়েছিল চট্টগ্রামে, যেখানে কিনা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। যদিও লেখকের নিজস্ব ধারনা মেজর মঞ্জুর কর্তৃক ঘাতক বাহিনী প্ররনের অন্যতম ইন্ধনদাতা মঞ্জুরের স্বয়ং স্ত্রী। এত কিছুর পরও জিয়াউর রহিমানের প্রতি লেখকের সহানুভূতি প্রকাশ পায় কারণ মৃত্যুর পর দেখা যা জিয়া তার পরিবারের জন্য কিছু করে যেতে পারে নি। পাশাপাশি কর্ণেল তাহেরের বীরত্বগাথা তিনি তার ফাঁসি পর্যন্ত বর্ণ্না করেন।
বইয়ের কয়েকটি এপিগ্রামের মধ্যে একটিতে তিনি বলেছেন, যে লাঠি দিয়ে অন্ধমানুষ পথ চলে, সে লাঠি দিয়ে মানুষও খুন করা যায়। অর্থ্যাৎ একটাই বস্তু যা কখনও ভাল আর কখনও খারাপের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে তিনি বলেছেন অনেক না বলা কথা, বুঝিয়েছেন রাজনীতিবিদদের সম্পর্কেও।
বইটি মূলত বিতর্কিত হয় এবং তা আদালত পর্যন্ত গড়ায় ২ টি কারণে। প্রথমটি শেখ রাসেলের হত্যার বর্ণ্নায় ভুল ও দ্বিতীয়টি মেজর মোস্তাককে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় ছিল না বলে উল্লেখ্য আছে যা কি না আদালতের রায়ের বিপরীত। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে হুমায়ূন আহমেদ তা সংশোধন করতে চাইলেও তা আর হয়ে ওঠে নি অসুস্থতার জন্য।
লেখকের উল্লেখ অনুযায়ী তিনি কখনই রাজনীতিতে ছিলেন না এবং এজন্য খোলসের মধ্যে থাকতেন সর্বদা। এই খোলসের উদাহরণ পাওয়া যায় শিক্ষকের চাপে তার বাকশালে সম্মতি জানানোর বিষয়ে। এক্ষেত্রেও হয়ত তিনি তার সেই খোলস দিয়েই আদালত থেকে পাশ কাটিয়ে গেছেন কি না তা স্বয়ং তিনিই জানেন।
দেশমাতার ঋন শোধ করতে তিনি রচনা করেছিলেন "জোছনা ও জননীর গল্প”। আর শেষকালে লেখক হিসাবে সেই মায়ের বাকি সন্তানদের কাছে নিজ দায়িত্ব হিসাবেই দিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে যান “দেয়াল” যার ফলে বর্তমান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব প্রতীয়মান হয় তাদের নিকট।
মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কণীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।
কণীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।
No comments