Header Ads

মাতাল হাওয়া

মাতাল হাওয়া (২০১০); হুমায়ূন আহমেদ :৭.৮

চারটি বইয়ে গল্পের জালে ইতিহাসকে মোড়ানোর যে অভিপ্রায় দেখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ, তারই একটি হলো “মাতাল হাওয়া”। সেই অনুযায়ী মধ্যাহ্নের পরের পর্ব হল এটি। ’৬৯ এর স্বাধিকার আন্দোলনের সময়ের উত্তাল হাওয়ার সাথে কিছু গল্প মিশিয়ে তুলে রেখেছেন এই বইটিতে। যে গল্পে নাদিয়া নামের মেয়েটির পাশাপাশি এগিয়েছে তার নিজের কিছু সময়ের  গল্প। ২০১০ এর বাংলা একাডেমী বইমেলার জনপ্রিয় গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল “মাতাল হাওয়া” বইটি।
এবার যদি গল্পের দিকে লক্ষ্য করি তবে যে মূল চরিত্র সামনে আসে তা হল ময়মনসিংহ শহরের উকিল হাবিব যে কিনা গভর্ণর মোনায়েম খানের আত্মীয়, এবং তার সুযোগেই যে কাউকে চাকরীচ্যুত করা বা তার বিরুদ্ধে যাওয়া কোন পত্রিকার সম্পাদককে একচুল ছাড় দেন না। বাকি চরিত্রগুলো হলো হাবীব সাহেবের মেয়ে নাদিয়া, মা হাজেরা বেগম,এসিসটেন্ট প্রণব বাবু এবং তার বাসায় আশ্রিত ফরিদ ও তার বউ সফুরা।নাদিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী এবং পছন্দ করেন তার ডিপার্টমেন্টের এক তরুণ শিক্ষক বিদ্যুত কান্তি কে; যেখানে দেশে তখন চলছে হিন্দুদের বিতাড়িত করার মত ঘটনা।এর পাশাপাশি আরেকটি চরিত্র চলে আসে। সে হলো জলমহলের মালিক হাসান রাজা চৌধুরী। হাসন রাজা খুন  করে তার মামাকে এবং হাবীব সাহেব তার মামলা নেবা মাধ্যমে দুটি চরিত্রের যোগসূত্র তৈরি হয়।
কিছু সময় লেখক সরাসরি তার কথা বলে গেছেন, কারণ সে সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং থাকেন মোহসিন হলে, আর সাবসিডিয়ারি কোর্সে পরিচিত হয় নাদিয়ার সাথে। তিনি তুলে এনেছেন সেই সময়ের অস্থিতিশীল ছাত্র রাজনীতিকে, যা থেকে বাচতে তিনি শামুকে মতো খোলস তৈরী করে থাকতেন, ভয়ে থাকতেন এনএসএফ নামক সরকারি নেতাদের জন্য। এত প্রতিকূলতায় তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি উল্লেখ্য করেছেন রূপাকে সৃষ্টির পেছনের গল্পকে এবং তার সম্পর্কে ছুড়ে দেন আরেকটি এপিগ্রামঃ "আমরা কাউকে হারাতে চাই না, তবুও সবাইকে হারাতে হয়”।
পুরো সময় জুড়ে এলোপাথারি বিন্যাস অর্থ্যাৎ কখনও নাদিয়া আর কখনও নিজের বা কখনো দেশের কথা বলার মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন সেই মাতাল প্রলয়ংকারী সময়কে। যদিও ইতিহাস খুজতে গেলে দেখবেন তার পরিমাণ যৎসামান্যই। সর্বপরি নির্দিষ্ট কোন প্লটে রাখা যায় না গল্পগুলোকে, তার মধ্যে হাজেরা বিবির অযাচিত সংলাপ চেষ্টা করবে পাঠককে জোর করে হাসাতে এবং বরাবরই ব্যর্থ হয়। তবে শেষে একটি ক্লাইম্যাক্স দিয়ে সব খুঁত কাটানোর চেষ্টা করেন লেখক। এতে কতটুকু সফল হয়েছেন তার বিচার করতে তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলুন বইটি।

মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কণীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।

 

No comments

Powered by Blogger.