গৌরীপুর জংশন
গৌরীপুর জংশন (১৯৯১); হুমায়ূন আহমেদ : ৭.৪
৪২ পৃষ্টার এই বইটাকে কেন
উপন্যাস বলা হচ্ছে তা বোধগম্য না আমার কাছে। এত অল্প বিস্তৃতি কি হয় উপন্যাসে, কিংবা
চরিত্রই যদি ধরা হয় সেক্ষেত্রে একটি চরিত্র শুধু তার কথা বলে গেছে পুরোটা জুড়ে। এই
অল্প পরিসরের মধ্যেও হুমায়ূন আহমেদ এতটা গভীরে গেছেন, দেখিয়েছেন সেই চির চেনা কোন রেলস্টেশনের
কাহিনী যেখানে আমরাও প্রতিনিয়ত যাই। কিন্তু সেই সাধারণ মানুষগুলোকে নিয়ে, তাদের জীবনের
গল্পকে নিয়ে এত ভাবা হয়ে ওঠে না। আমাদের চোখে স্টেশন হল কোন চা বিক্রেতা, কুলি, মজুর
বা বইয়ের ছোট্ট দোকানেই সীমাবদ্ধ।
সেই চির চেনা স্টেশনের ৪০
বছরের কুলি জয়নালকে নিয়ে গল্প বলেছেন লেখক। দুর্ঘটনায় পঙ্গু প্রায় জয়নালকে দেখার জন্যও
যে মালবাবু বা লাইনম্যান রমজান থাকে স্টেশনে, কোন সম্পর্ক ছাড়াও তারা নিতান্তই আপন।
জয়নালের মতো কুলিরাও তাই মালবাবু বা লাইনম্যান রমজানের কিছু উপকারের চেষ্টায় থাকে সবসময়।
এত সুন্দর মানসিকতার পরেও তাদের মধ্যে যে চোর লুকিয়ে থাকে তাও দেখিয়েছেন লেখক, যে কিনা
চুরিকে আবার যুক্তি দিয়ে ভাল কাজে রূপান্তর করে, যেন এটিই তার নৈতিক দায়িত্ব। আবার সেই চুরির টাকা দিয়ে সাহায্য করে চা স্টলে কাপ
হারায়ে ফেলে বিপদে পড়া বাচ্চাকে। একজন মানুষের দুই সত্ত্বার সমান উপাখ্যান দিয়েছেন
লেখক। বাবা মা হারানো বজলুর প্রতিও তার অদ্ভুদ এক মায়া দেখা যায়, যে মায়া সে বাড়াতে
চায় না। পাশাপাশি স্টেশনে কুলি সর্দার হাশেমদের যে অধিপত্তকে কেন্দ্র করে অন্যায় কাজগুলোকে
তুলে এনেছেন। এত কিছুর পরও জয়নালের মতো লেখাপড়া না করা মানুষের দর্শন নিয়ে আমার খটকা
আছে; যেমন কাদলে ফুস্ফুস ঠিক থাকে এটা জানা তো পরের কথা; আমার মতে তাদের মতো কুলির
কাছে ফুস্ফুস আর কিডনী একই।
সর্বোপরি, ছোট একটি উপন্যাস
যা সময় কাটানোর জন্য খুবই ভাল। নতুন এক পরিবেশ বা নতুন সেই পরিচিত চরিত্রগুলোর জীবনধারা
জানার জন্য খুবই ভাল একটি লেখা।
মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কনীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।
No comments