বরফ গলা নদী
বরফ গলা নদী (১৯৯৮); জহির রায়হান : ৮.৫
বুকে শত কষ্টের জমানো বরফকে
গলিয়ে জীবনের স্রোতে চলার উদাহরণ হিসাবে জহির রায়হান লিখে গিয়েছেন “বরফ গলা নদী”। পাকিস্তানীরা
আমাদের কতটুকু ক্ষতি করেছে, তা এই শুধুমাত্র এই লেখকের বই পড়লেই বোঝা যায়। হায়নাগুলো
ছিনিয়ে শুধু তাকে ছিনিয়ে নেয়নি, জন্মানোর আগেই নিয়ে গেছে বাংলা সাহিত্যের এক সেলফ বই।
লেখক বইটাকে সাজিয়েছেন অন্য ধাচে, আর ৫টা বইয়ের মতো না। এই বই না পড়ে আপনি জহির রায়হানকে
চিনতে পারবেন না। যতটা সহজ ভঙ্গিতে বলেছেন “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের গল্প, এখানে ততটা
সাবলীলভাবে না যাওয়ায় আলাদা মাত্রা পেয়েছে বইটি।
একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের
গল্প আনতে যা হয়, এখানে লেখক তাই করেছেন। দরিদ্র হাসমত আলী ও সালেহা বিবির পাঁচ সন্তান,
মাহমুদ, মরিয়ম, হাসিনা, খোকন ও দুলু’র গল্পই হল “বরফ গলা নদী’। এখানের প্রধান চরিত্র
হিসাবে মরিয়মকে দেখলেও, লেখক হঠাৎ এই দায়িত্ব দিয়ে দেন মাহমুদকে। এই গল্প নিয়ে কিছু
বললেই তা স্পয়লার ছাড়া কিছুই হবে না। শুধু এটুকুই বলা যায় প্রেম, বিশ্বাস, আবেগ আর
উত্থান-পতনে মোড়া একটা প্লট সাজিয়েছে লেখক যেখানে হাসমত আলীর অসহায়তা, সালেহা বিবির
মাতৃত্ববোধ, মরিয়মের সংগ্রামী জীবন আপনার ভালো লাগবেই। পাশাপাশি আরও দুটি চরিত্র গল্পকে
পূর্ণতা দিয়েছে; একটি হল মনসুর আর অন্যটি লিলি। এই লিলি চরিত্রটি ভালবাসাপূর্ণ একটি
চরিত্র হলেও, তার সম্পর্কে কম বর্ণ্নার গল্পে কোথাও অপূর্নতা এনে দিয়েছে কারণ এটিই
অন্যতম একটি চরিত্রে পরিণত হয় শেষ পর্যন্ত।
পুরো ছন্দে বয়ে চলা একটা
গল্প হঠাৎই আপনাকে থমকে দিয়ে শেষ হয়ে যাবে। শুধু ভাববেন গল্পকে এই পর্যায়ে নেয়ার কি
দরকার ছিল? কি প্রয়োজন ছিল বিষাদের বরফ জমানোর?
মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কনীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।
No comments