Header Ads

পুতুল নাচের ইতিকথা

পুতুল নাচের ইতিকথা (১৯৩৬); মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ৯.১


পুরো বইটি পড়ে পুতুল নাচ তো পরের কথা, কোন পুতুলেরও উল্লেখ্য নেই; তাহলে “পুতুল নাচের ইতিকথার”র  কথা আসতেছে কই থেকে? মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরো উপন্যাস জুরে কিছু অদৃশ্য সুতা দিয়ে নাচিয়েছেন সবাইকে, সবাইকে বানিয়েছেন পুতুল আর সুতাটা দিয়েছে অদৃশ্য কারও হাতে। আর তাই পুতুল্গুলো নিজের ইচ্ছাতেও কিছু করতে পরে না। কেউ হয়ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জিতে যাচ্ছে কেউ বা হেরে যাচ্ছে। কোন গল্প বলতে বলতে সেই দৃশ্যকে আপনার চোখের সামনে ফুটিয়ে আনতে চাইলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসেই আপনাকে থামতে হবে। গাছের সামান্য পাতা নড়া, কিংবা কোন চড়ুই পাখির উরে যাওয়ার কথাও তার বর্ণ্না থেকে বাদ যায় এই বিজ্ঞান মনস্ক লেখকের থেকে।
গল্পটি যদিও একক কোন ব্যক্তির নয়, কাহিনী আগায় অনেককে সাতে নিয়ে। তবুও কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে  আমরা যে যুবককে দেখব সে নব্য ডাক্তার শশী, যার বাবা এলাকার ধূর্ত ও চতুর মহাজন এবং খারাপ উপায়ে সব অর্থ জমিয়েছেন। শশী ছোট থেকেই গ্রামে ছিল, যার জন্য তার চরিত্রে শহুরে বা গ্রামীণ দুই রকমেরই প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গাওদিয়া গ্রামের হারু নামের একজন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শশী গ্রামে আসে এবং উদ্দেশ্য ছিল বাবার থেকে বিদায় নিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেই গ্রামীন চরিত্রের প্রভাবে আটকে যায় কিছু সময়ের জন্য। শুরু করে সেন দিদির চিকিৎসা। এই সেন দিদি অধীকতর সুন্দরী, যার কারণে গ্রামে নানারকম কথা রটানো তাকে নিয়ে। গোপালের সেন দিদির প্রতি শশীর এতটা আগ্রহ পছন্দ হয় না। শশীর শহুরে জীবনে যে ভূমিকা রেখেছিল সেই বন্ধু কুমুদ তার জীবনেকে উপভোগ্য করতে যোগ দেয় যাত্রা দলে। এরই সূত্র ধরে কুমুদের আগমণ হয় গাওদিয়ায় আর বিয়ে হয় মতি নামের মেয়ের সাথে। মতি কুমুদের অদ্ভুদ জীবন পছন্দ না করলেও কোন অদৃশ্য কারণে সেখানেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনই অদ্ভুদ এক নাচের উল্লেখ্য পাওয়া যায় শশীর বোন বিন্দু আর তার জামাই নন্দের সাথে। এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল যাদব পন্ডিত; সে তার সূর্যবিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন এবং তার অত্যহত্মার করে হলেও দেখিয়ে গেছেন তিনিই ঠিক। তার মৃত্যুর পর জানা যায় তার অগাধ অর্থ পাবে শশী যা দিয়ে সে হাস্পাতাল নির্মাণ শুরু করে যদিও এই টাকার উৎপত্তি সম্পর্কে কেউ জানে না। শশীর জীবনের সাথে অন্য যে চরিত্রের গল্প এগোতে থাকে সে হল পরানের বউ কুসুম। কুসুমের ভালবাসা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে যখন বুঝতে পারে তখন ঢের দেরি হয়ে যায়। কুসুম তার লক্ষ্য বদলিয়ে বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে বিদায় নেয়। শুধু বাকি থাকে শশী, যে কিনা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে যেতে এক সময় মাটির টিলার উপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার সাধ জাগে না তার।
সব চরিত্রগুলোকে সমান্তরালে হাটিয়েছেন লেখক আর জন্ম দিয়েছেন জীবন বোধ ও সমাজ চেতনা নিয়ে লেখা এক কালজয়ী উপন্যাসের। যদিও তিনি এর আরেক খন্ড লিখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাংলা সাহিত্য তাকে আর পায় নি।

মোঃ রাজিবুল ইসলাম
স্বপ্নভিলা, সোনারবাংলা, বালুচর।


2 comments:

Powered by Blogger.