নির্বাসন
নির্বাসন
(২০০৯); হুমায়ূন
আহমেদ
: ৭.৮
নির্বাসন
বলতেই ছোটবেলায় দেখা তাপস পালের সিনেমার কথা মনে আসে। আগে এইরকম শাস্তি দেবার এই প্রথা
প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এর বিপরীতটাই লক্ষ্যনীয়। যন্ত্রের মতো চলতে চলতে মানুষ সেচ্ছায়
কিছুদিনের নির্বাসন চান। নিজেকে খুজে পেতে মাঝে মাঝে একাকীত্বের বিকল্প নাই। আপনার
কখনো ইচ্ছে হয়েছিল সব ফেলে গহীন অরণ্যে কিছুদিন একা থাকতে?
যাই
হোক, হুমায়ূন আহমেদের নির্বাসন উপন্যাসের দিকে ফেরা যাক। এটিকে রোমান্টিক ধরনের উপন্যাস
হিসাবে ধরা হয়। বইটাকে রোমান্টিক বলা নিয়ে আমার আপত্তি না থাকলেও উপন্যাস বলাতে আমার
দ্বন্দ আছে। কেন জানি উপন্যাসের ব্যাপ্তিটা এখানে পূর্ণ হয়নি; যা লেখকের অনেক লেখার
ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়। উপন্যাসটা একটা বিয়ে বাড়িকে কেন্দ্র করে। এই আনন্দ উৎসবটাকে লেখক
অনেক ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখিয়েছেন। এই আনন্দের মধ্যেও বিষাদের কমতি রাখেন নি তিনি।
গল্পের
মূল নায়ক হিসেবে আমরা আনিসকে বেছে নিতে পারি। যে ভালোবেসেছিল তার চাচাতো বোন জরীকে।
সেই জরির বিয়ের দিনের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টুকুই এই উপন্যাস। আনিস-জরীর প্রনয়টা
বিয়ে পর্যন্ত গড়াতো। তবে এমনটা হয় নি, কারণ
আর্মির লেফট্যানেন্ট ছিল আনিস। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মেরুদণ্ডে গুলি লাগে আর তারপর
থেকে কোমরের নিচ থেকে অবশ। ব্যাথার জন্য প্যাথিড্রিন নিয়ে
ঘুমোতে হয় তাকে। তাই সে আর মুখ ফুটে বিয়ের প্রস্তাব চাচাকে দিতে পারে না। এই পঙ্গুত্বতার
জন্য অসুস্থ আনিসকে তার চাচার বাসায় থেকে জরীর বিয়ে দেখতে হয়। এখানে নির্বাসন নামের
স্বার্থকতা ফুটে ওঠে।
অন্যদিকে
জরীও আনিসকে নিজের বলে পরিবারের কাছে দাবী করতে পারে না। সব মেনে নিয়ে অপরিচিত কারও
সংসারে নির্বাসিত হবার প্রস্তুতি নেয় সে। এই দুজনের স্নিগ্ধ আর মায়াময় প্রেমের মোহ
দেখে আপনার অবচেতন মন সবসময় বিয়েটাকে ভাঙ্গাতে চাইবে।
এই
দুইজনের পাশাপাশি জরীর বোন বা তার বান্ধবীদের মতো ছোট চরিত্রগুলো এগিয়ে নিয়েছে ঘটনাক্রম।
তবে এই চরিত্রগুলোর বিস্তৃতি নেই বললেই চলে। তাই রয়ে যায় কতোগুলো প্রশ্ন। যেমন, "আতর বৌ" এ র বাড়ি ছাড়ার কারণ কিংবা বেতারে গান করা
জরীর ছোটবেলার বান্ধবীর সৌন্দর্যের প্রশংসায় উদাসীনতা অথবা অনিসকে তার মা’র না নিয়ে
যাওয়ার কারণ । ছোট গল্পের মতো লেখক এসব শেষ করেন্অনি, নিজের মতো উত্তর খোজার সুযোগ
দিয়েছেন।
সর্বপরি
পুরো বইয়ে আপনি আনিস নামের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ভাঙ্গার বিষন্নতা খুজে পাবেন। বিয়ে
বাড়ির আনন্দঘন পরিবেশে যে হাহাকারের মিশ্রন, তা আপনার সুখের স্মৃতিগুলোর পাশে থাকা
কোন বিষাদকে আলোড়িত করতে পারে।
মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কনীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।
No comments