Header Ads

আগুনের পরশমণি


আগুনের পরশমণি (১৯৮৯); হুমায়ূন আহমেদ : ৮.০

বাংলাদেশের জাতীয় দিবস গুলোতে টেলিভিশন ছাড়লেই যে কয়টা সিনেমা চলে তার মধ্যে আগুনের পরশমণি একটা । তাই এই নামটা শুনলেই আমার সামনে যতটুকু এই উপন্যাসটা আসে তার চেয়ে বেশি আসে সিনেমাটা। এই সিনেমা দিয়ে “হুমায়ূন আহমেদ” তার পরিচালকের জীবনে পদার্পন করেন। তিনি ছিলেন বাংলার আকাশের এক রাজপুত্র; নইলে কি প্রথম কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া সিনেমা তৈরি করে সব পুরস্কারগুলো নেওয়া যায়? অস্কারের মতো “বিগ ফাইভ” কোন ক্যাটাগরি থাকলে এই সিনেমা থাকত সেই তালিকায়।
পরিচালক এবং লেখকে দৃষ্টিভঙ্গি বা বাচনভঙ্গি কখনও এক হয় না। দুইটা দুই মাধ্যম এবং প্রকাশের ধরনও আলদা। প্রকৃত অর্থে পরিচালকের কাজ দেখার জন্য সিনেমা দেখতে হয়, তবে গল্প বা কাহিনীর জন্য বইই সেরা। আগুনের পরশমণি সিনেমার পরিচালক আর বইয়ের লেখক একজন হলেও সিনেমা আর বইয়ে বেশ কিছু পার্থক্যই আছে। যেমনঃ বইয়ের কেন্দ্রীয় নায়িকা রাত্রির ফুফু উপন্যাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যিনি কি না সিনেমায় অনুপস্থিত। পাশাপাশি গল্পের নায়ক বদিউল আলমের মা আর বোনের কথা বইয়ে না থাকলেও, তারা সিনেমাতে চলে আসেন। এছাড়াও উপস্থাপনায় এই দুই মাধ্যমের মধ্যে “হুমায়ূন আহমেদ” বেশ কিছু বৈচিত্রতা রেখেছেন। যাই হোক, বইয়ের কথা বলতে এসে সিনেমায় হারানো অনুচিত; যদিও তুলনা বা কথা প্রসঙ্গে চলে আসতেই পারে সিনেমাটা।
গল্পের শুরু হয় ১৯৭১ এর  জুলাই মাসের ৬ তারিখে; যখন ঢাকায় গেরিলা বাহিনী প্রবেশ করে। মতিন সাহেব সে সময় তার স্ত্রী সুরমা, দুই মেয়ে রাত্রি আর অপলাকে নিয়ে থাকেন। বাসায় বৃন্তি নামের এক কাজের মেয়েও আছে। সেই সময়টাতে মতিন সাহেবের প্রধান কাজ রেডিও শোনা। মতিন সাহেবের বোন আছে একটা। তার বোনের জামাই বোকা টাইপের হলেও ব্যবসা করে অনেক অর্থ উপার্জন করেছে। তবে তাদের সন্তান নেই, তাই রাত্রি-অপলাকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন এবং কিছুদিন পরপর রাত্রি-আপলা তার ফুফুর বাসায় থাকে। মতিন সাহেবের পরিবারকে নিয়েই পুরো উপন্যাস।
কাহিনীর শুরুটা হয় আর পাঁচটা গল্পের মতো সাবলীলভাবে। মতিন সাহেব অপেক্ষা করতে থাকে বদিউল আলম নামের এক গেরিলা যোদ্ধার জন্য যে কিনা এক সপ্তাহের জন্য তার বাসায় আশ্রয় নেবে। এখানে থেকে আলম দুইটা গেরিলা আক্রমন চালাবে ঢাকায়। আলমের তাদের বাসায় থাকাটা ঠিকভাবে নিতে পারে নি মতিন সাহেবের স্ত্রী সুরমা। কারণ দুই মেয়ের জন্য হলেও তিনি কোন ঝামেলায় জড়াতে চান নি। তারপরও সব মেনে নিয়ে আলমের প্রতি আতিথেয়তার ঘাটতি রাখে নি। তবে সিনেমায় সুরমা চরিত্রে ডলি জহুরের মধ্য কাঠিন্যতা একটু বেশিই পেয়েছ আমি।
অন্যদিকে অপলা খুব চঞ্চল একটি মেয়ে, তবে রাত্রি তার বিপরীত। ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া রাত্রি বেশিই চুপচাপ ধরনের। এই সরল মেয়েটা আলমের পরিচয় জানার পর, তার প্রতি তৈরি হয় ভালোলাগার। যখন আলম গেরিলা আক্রমনে যায়, রাত্রি কেন চিন্তিত হয়ে আলম ফিরেছে কি না তা জানার জন্য বারবার ফোন দেয় তার মাকে? আলম কি শেষ পর্যন্ত ফেরে?
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা অনবদ্য এক উপন্যাস এটি। কেউ সিনেমা দেখে বই না পড়ে থাকলে বলব, পড়ে নিন বইটা। বইটার অসম্ভব সুন্দর একটা লাইন হলো, 
বেঁচে থাকার মতো আনন্দ আর কিছুই নেই
 লাইনটা মনে হলেই কেমন যেন শূন্যতা তৈরি হয়।



মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কনীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।

No comments

Powered by Blogger.