Header Ads

অপেক্ষা


অপেক্ষা (১৯৯৭); হুমায়ূন আহমেদ : ৮.৬ 

অনেক রকমের অপেক্ষা করে জীবন পার করি আমরা। সবাই কিছু না কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা তো কতই না নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেখি। কখনও কি ভেবেছি কেমন কাটে সেসব পরিবারের যাদের কেউ হারিয়ে যায়? প্রতিটা মুহূর্ত কাটে পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে। কোন হারানো মানুষ ১২ বছরের মধ্যে ফিরে না এলে আইন অনুযায়ী তাকে মৃত ধরা হয়। আচ্ছা, মৃত মানুষের জন্য মানুষ কি অপেক্ষা করে? হুমায়ূন আহমেদ কোন অপেক্ষার কথা বলেছেন বইটিতে?
হাসানুজ্জামান আর সুরাইয়া দম্পতির একমাত্র ছেলে ইমন। ছোট এই পরিবারকে দিয়েই শুরু হয় গল্প। সুখী এই পরিবারের আগমন ঘটতে যাচ্ছে নতুন সদস্যের। এই সংবাদ হাসানুজ্জামানকে দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন সুরাইয়া। তবে সেই রাতে ফিরলেন না তিনি! অনেক খোঁজার পরও পাওয়া গেল না তাকে। কিছুদিন পর সুরাইয়া গিয়ে উঠলেন তার ভাইয়ের বাসায়। শুরু হয় নতুন জীবনের। সুরাইয়া স্বপ্ন দেখেছিল, তার ছেলে ইমনের বিয়ের দিন ফিরবে হাসানুজ্জামান। শুধুমাত্র এই আশাটুকু নিয়ে তীব্র যন্ত্রণার সাথে সে জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি ঘরে আবদ্ধ থেকে সে অপেক্ষা করতে থাকে। উপন্যাসের পাতা বাড়তে থাকে, সময়ও বাড়তে থাকে, আর শেষ অংশে ইমনের বিয়ের সময় চলে আসে। সুরাইয়া বারান্দায় অপেক্ষা করে তার স্বামীর জন্য। মধ্যরাতে কলিং বেলটা বেজে ওঠে। কে এসেছিল এত রাতে?
বইয়ের নামের সাথে মিল রেখে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার বিষয়টা তুলে এনেছেন লেখক। আর তার মধ্যে তিনি অন্য চরিত্র বা ঘটনাক্রমকে সমানভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। যেমন, মূল বইয়ের মূল বিষয়টা সুরাইয়র অপেক্ষা নিয়ে হলেও গল্পের নায়ক হিসাবে চলে আসবে তার ছেলে ইমন। অন্যদিকে তার নায়িকা হিসাবে আসবে তার মামাতো বোন মিতু। তাদের প্রেম কাহিনিও আপনাকে আটকিয়ে রাখবে।
আমরা যদি ইমনের দিকে তাকাই, তবে দেখব এক আশ্রিত জীবনে তার কষ্ট করে বেরে ওঠা। লেখাপড়া করেই শুধুমাত্র সে তার জীবনের গতিবিধি পরিবর্তন করতে পেরেছিল। অন্যাদিকে, ইমনের বোন সুপ্রভা ছিল তার বিপরীত। সে ছোট থেকেই তার জীবনকে উপভোগ করেছে শত প্রতিকুলতার মধ্যে।গল্পের নায়িকা মিতু ছোট থেকেই ইমনকে পছন্দ করত, তা বোঝা যায়, পেন্সিল হারিয়ে কান্না করা ইমনকে মিতু যখন নিজের পেন্সিল দেয়।
পাশাপাশি গল্পে ফুটে উঠেছে সুরাইয়ার ভাই জামিলুর রহমানের পরিবারের গল্প। পরিবারের লোকদের সময় না দিলে তা যে বিপথে যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার দুই ছেলে শোভন আর টোকন। এছাড়াও গল্পের প্রয়োজনে কিছু পার্শ্ব চরিত্রও ছিল উপন্যাসে।
প্রতি পাতায় পাঠককে আটকে রাখার গুণ তো হুমায়ূন আহমেদের সব বইয়েই পাওয়া যায়। এটাতে তার ব্যতীক্রম ছিল না। বইটা আমি পড়েছিলাম আরও ৪ বছর আগে। অল্প বয়স হোক বা যে কারণই হোক, প্রচন্ড টান অনুভব করেছিলাম গল্পের প্রতি। তাই লেখকের ভাল কিছু উপন্যাসের মধ্যে এই বইটিকে আমি রাখি সবসময়। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় একটা এপিগ্রাম পাওয়া যায় এই বইটিতেই, যেটি শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া দুরূহ-
“পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় জিনিসগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমনঃ জোছনা, বৃষ্টি, মানুষের ভালোবাসা।“


মোঃ রাজিবুল ইসলাম
কণীনিকা কুঞ্জ, নারুলী।।

No comments

Powered by Blogger.